বৈষম্যের বেড়াজালে আনসার বাহিনীর সদস্যরা
সংশ্লিষ্টরা জানান, হয়তো পোশাকের বিষয়ে বর্তমান মহাপরিচালক জানেন না বা, জানানো হয়নি। ভান্ডারে পড়ে আছে বিপুল অঙ্কের ব্যয়ে তৈরি এসব অনুপযোগী পোশাক।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বাহিনীটির সদরদপ্তরের উপপরিচালক (প্রভিশন ও অতিরিক্ত দায়িত্ব ভান্ডার) আশরাফুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, এসব পোশাকের বিষয়টি তদন্তাধীন আছে।
অপারেশন সুরক্ষিত যাতায়াতের টাকা মেলেনি প্রায় এক বছরেও
২০২৩ সালে দেশব্যাপী অস্থিরতার কারণে অপারেশন সুরক্ষিত যাতায়াতের আওতায় রেলপথের নিরাপত্তায় আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ ডিউটি চলে ২০২৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত।ক
য়েক দফায় মোট ৫৮ দিন ডিউটি করেন তারা। ভাতা পেয়েছেন মাত্র ২৮ দিনের। আরও ৩০ দিনের ভাতা বকেয়া তাদের। শীতের কনকনে ঠান্ডায় ডিউটি করেও কবে পাবেন সেই ভাতা তা আদৌ জানে না কেউ ।
ভুক্তভোগী আলামিন নামের একজন বলেন, কনকনে শীতে ডিউটি করেছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদরদপ্তরের পরিচালক (অর্থ) মোহা. শফিকুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অর্থ না দিলে তো আমরা দিতে পারছি না। আমাদের অপারেশন শাখা এটা নিয়ে কাজ করছে। বাজেট পাস হলে সদস্যরা টাকা পাবেন।
অন্যদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাহিনীর মাঠ পর্যায়ে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা, কর্মচারীরা বিভিন্ন বৈষ্যম্যের শিকার। তাদের অনেকে সুদীর্ঘ সময়েও পদোন্নতি পাননি। পদমর্যাদা ভেদে অন্যান্য বাহিনীর তুলনায় একধাপ নিম্নবেতন, নেই কোনো আবাসন সুবিধা, তাদেরকে নিজ বিভাগের বাহিরে ৪০০-৫০০ কিঃ মিঃ দূরে বদলী/ পদায়ন করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবার হয়রানিমূলকভাবে নিজ পদে সংযুক্ত করা হয় যেটি নজিরবিহীন বলে জানান ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগী একাধিক কর্মকর্তা জানান, নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পরিবার, পরিজন, সুবিধা-অসুবিধার কথা বিবেচনা না করে তাদের প্রতি এক প্রকার মানসিক অত্যাচার ও হয়রানী মুলক বদলীর মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ অর্পিত দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন।
এমন পরিস্থিতিতে মাঠ সংগঠনের কর্মকর্তাদেরকে দূরবর্তী স্থানে বদলী করায় অনেকের অসুস্থ বাবা-মা, ছেলে-মেয়ে, পরিবার বিপদগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে সহকারী পরিচালক (রেকর্ড) আবুল কালাম আজাদের মোবাইল নাম্বারে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।
জানা যায়, সম্প্রতি আনসার বাহিনীর পক্ষ থেকে বাহিনীর সংস্কারের জন্য একটি সংস্কার ডেস্ক অর্থাত্ সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাহিনীর অতিরিক্ত মহাপরিচালককে সভাপতি করে পাঁচ সদস্যের এ কমিটিতে মাঠ পর্যায়ের কাউকেই রাখা হয়নি। নেই কোনো নন-ক্যাডার কর্মকর্তা, নেই কোনো সৈনিক বা কর্মচারী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নতুন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ যোগদান করার পর পদোন্নাতিসহ নানা দাবি পূরণের আশায় বুক বাধে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সকলেই। নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে তার কাছে কিছু আবেদন ও করা হয়। এতে হিতে বিপরীত ঘটে তাদের কপালে।
সংশ্লিষ্টরাা জানান, উপজেলা পর্যায়ে প্রায় সব দফতর প্রধানের পদ ৯ম গ্রেড এবং কিছু দফতরপ্রধান ষষ্ঠ গ্রেড হলেও আপগ্রেডেশন হয়নি উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তার পদটি। উপজেলায় এই পদটি উপজেলা পর্যায়ে আনসার ও ভিডিপির প্রধান প্রশাসনিক পদ। পদটি এখনও ১০ম গ্রেডেই রয়ে গেছে।
উপজেলা পর্যায়ের দুজন কর্মকর্তা জানান, তাদের দাবিগুলো নিয়ে মহাপরিচালক আন্তরিক থাকলেও চরম ক্ষুব্ধ হন বাহিনীর ক্যাডার কর্মকর্তারা। দীর্ঘদিনের বৈষম্য জিইয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তারা। দুর্গাপূজার মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের আগমুহূর্তে চাপিয়ে দেন গ্রাম প্রশিক্ষণ। উপজেলাগুলোতে একটার পর একটা নির্দেশনা সদর দপ্তর থেকে আসতে থাকে। যার বেশিরভাগই হয়রানি করার উদ্দেশ্যে বলে দাবি করছেন তারা।
এমন পরিস্থিতিতে বাহিনীর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বাহিনীর এমন করুণ পরিণতির জন্য সরাসরি ক্যাডার কর্মকর্তাদের দায়ী করছেন। তাদের চাওয়া, নন-ক্যাডার উপজেলা কর্মকর্তা থেকে পদোন্নতি পেয়ে উপরের পদে আসীন হোক কর্মকর্তারা। এতে মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা যেমন কাজে লাগবে, তেমনি দূরীভূত হবে সকল বৈষম্যের।
-কালের কন্ঠ
