টানা ৫ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না ৬০ আনসার সদস্য

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্বপালনকারী ৬০ জন আনসার সদস্য ৫ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। এতে চরম অর্থসংকটে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাঁরা। নিরাপত্তাসেবা খাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক বরাদ্দের অনুমোদন নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে হাসপাতালটির নিরাপত্তার জন্য ৬০ আনসার সদস্য অঙ্গীভূত হিসেবে কর্মরত আছেন। বর্তমানে সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন ১ জন প্লাটুন কমান্ডার (পিসি), ৪ জন সহকারী প্লাটুন কমান্ডার (এপিসি) এবং ৫৫ জন সাধারণ আনসার সদস্য। প্লাটুন কমান্ডার ১৭ হাজার ৭০০, সহকারী প্লাটুন কমান্ডার ১৬ হাজার ৯৫০ এবং সাধারণ আনসার সদস্য ১৬ হাজার ২০০ টাকা করে মাসিক বেতন পান।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনুকূলে নিরাপত্তাসেবা খাতে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও এসব আনসার সদস্যের বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, অর্থ বরাদ্দ দেওয়া থাকলে তারা কোড অনুযায়ী প্রয়োজনমতো খরচ করত। কিন্তু গত জুন মাসে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের চিঠিতে নিরাপত্তাসেবা খাতে খরচ করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে বলা হয়। এ কারণে আনসার সদস্যদের বেতন বকেয়া পড়ে গেছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশিকুর রহমান জানান, আনসার সদস্যদের দ্রুত বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগও আনসার সদস্যদের বেতন ছাড়ের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে।

হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসার সদস্য গোলাম রব্বানী বলেন, আনসার সদস্যদের অধিকাংশ নিম্নবিত্ত পরিবারের। তাঁরা বেতনের ওপর নির্ভরশীল। বেতন বকেয়া থাকায় খুব অসুবিধায় পড়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক আনসার সদস্য বলেন, বেতন বন্ধ থাকায় ভীষণ অর্থসংকটে পড়েছেন। গত মাসে বাড়িতে গিয়ে গরু বিক্রি করে ৩৪ হাজার টাকা নিয়ে এসেছেন। তাঁর ভাষ্য, মাত্র ১৬ হাজার ২০০ টাকা বেতন। এটা দিয়ে কোনোমতে পরিবার চলে। কিন্তু সে বেতনও বন্ধ। তাহলে সংসার কেমনে চলবে?

হাসপাতাল সূত্র জানায়, এসব আনসার সদস্যের বেতন দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের কাছে গত জুলাইয়ে চিঠি দেয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক মোহাম্মদ ইউনুস আলী। তখন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ দেওয়া জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। ওই চিঠির আলোকে অর্থ মন্ত্রণালয় গত নভেম্বরে ২৬ লাখ টাকা অর্থছাড় দেয়।

হাসপাতালের অফিস সহকারী মাসুদুর রহমান (তখন হিসাবরক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন) প্রথম আলোকে বলেন, এক মাসে আনসার সদস্যদের বেতন বাবদ ১১ লাখ টাকার বেশি প্রয়োজন হয়। ওই টাকা দিয়ে তাঁরা জুন ও জুলাই মাসের বেতন দিতে পেরেছেন। এরপর আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেতন বকেয়া আছে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url